বাংলাদেশে কোন কোন অঞ্চলে বেশি বন্যা হয় এবং বাংলাদেশের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি

বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। পদ্মা-মেঘনা-ব্রহ্মপুত্র বিধৌত বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ।  ছোট বড় সব মিলিয়ে প্রায় ২৫০ টি নদী বাংলাদেশকে জলের মতো জড়িয়ে রেখেছে। দেশের বড় নদীগুলো পাহাড়ি বৃষ্টিপাত ও হিমালয়ের বরফ গলা পানি বয়ে এনে প্রায় প্রতিবছর এই বন্যার সৃষ্টি করে। দেশের অভ্যন্তরীণ নদী গুলো প্রায় ১.৯ মিলিয়ন টন পলি ধারণ করে, যা পৃথিবীর সমগ্র পলির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। বাংলাদেশের প্রায় ৭১ শতাংশ মানুষ প্লাবনভূমিতে বসবাস করে। 


বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর বন্যা মৌসুম। কখনো কখনো আগাম বা দেরিতে বন্যা দেখা দেয়। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র হতে স্বল্প মেয়াদী হিসেবে পাঁচ দিন এবং মধ্যমেয়াদি হিসেবে দশ দিন পূর্বে পূর্বাভাস দেওয়া হয়। বন্যায় মানুষের প্রাণহানি কমিয়ে আনা সম্ভব হলেও এখনো সম্পদের ক্ষতি হ্রাস করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আজকে আর্টিকেল বাংলাদেশে কোন কোন অঞ্চলে বেশি বন্যা হয় এবং বাংলাদেশের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি এই বিষয়ে সাজানো হয়েছে।



বাংলাদেশে কোন কোন অঞ্চলে বেশি বন্যা হয় এবং বাংলাদেশের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি



বাংলাদেশে কোন কোন অঞ্চলে বেশি বন্যা হয় এবং বাংলাদেশের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি

বর্ষাকালে যখন নদী, খাল, বিল, হাওর ও নিচু এলাকা ছাড়িয়ে সমস্ত জনপদ পানিতে প্লাবিত হয় এবং এর প্রভাবে মাঠের ফসল, ঘরবাড়ি ,রাস্তাঘাট, ধন-সম্পদের ক্ষতিসাধন হয় তখন তাকে বন্যা বলে আখ্যায়িত করা হয়। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বন্যার সাথে ফসলের একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। 


বাংলাদেশে উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল এবং দক্ষিণ-মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের অধিকাংশ স্থানে বেশি বন্যা হয়। বাংলাদেশে উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলে পার্বত্য পরিবাহ নিষ্ক্রমণ আকাস্মিক বন্যার সৃষ্টি করে। এ অঞ্চলের বন্যা স্বল্প সময়ের জন্য হলেও সংগঠনের হার বা তীব্রতা সম্পর্কে আগে থেকে কিছুই জানা যায় না। একই বন্যা মৌসুমে এ ধরনের বন্যা বেশ কয়েকবার দেখা দিতে পারে। 


বাংলাদেশে সংঘটিত বন্যাকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথাক্রমে—

এক. মৌসুমী বন্যা : মৌসুমী বন্যা মূলত ঋতুগত বন্যা। এ সময় ঋতুগতভাবে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে নদ-নদীর পানি ধীরে ধীরে উঠানামা করে এবং বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত করে যান মালের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। দুই. আকস্মিক বন্যা : আকস্মিক পাহাড়ি ঢল অথবা স্বল্প সময় সংঘটিত প্রবাল বৃষ্টিপাতের কারণে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হতে পারে এবং তিন. মানবসৃষ্ট বন্যা।



পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের বাৎসরিক সম্মিলিত বন্যার প্রবাহ লোয়ার মেঘনা দিয়ে একটি মাত্র মৃগম পথ দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়ে। এ কারণে লোহার মেঘনার  ঢাল ও নিষ্ক্রমণ ক্ষমতা হ্রাস পায়। নদীর এই প্রতিকূল উচ্চতার পানির প্রভাব সারাদেশেই পড়ে। কেননা বন্যার পানি নিষ্ক্রমণের ক্ষমতা এবং অবস্থা দুটোই এর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যার ফলে ছোট নদীগুলোর প্রবাহ কমে এবং ভূপৃষ্ঠের পানির অভিকর্ষিক নিষ্ক্রমণ শুধুমাত্র বন্যার উপরে জেগে থাকা ভূমিতেই সীমাবদ্ধ। পানি নিষ্ক্রমণের প্রতিবন্ধকতার কারণেই বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের উঁচু ভূমি ও পার্বত্য অঞ্চল ছাড়া প্রায় সর্বত্রই বন্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। 


বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিম অঞ্চলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ একটি বাঁধ তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের ডান দিকের প্লাবনভূমিকে রক্ষা করছে। তবে তিস্তা বাঁধের ওপারে রাষ্ট্র ভারত বৃষ্টির সময় গেট খুলে দিলে বাংলাদেশের নিম্ন ভূমি অঞ্চল প্লাবিত হয়। মেঘনা নদীর পানির উচ্চমাত্রা বন্যার মৌসুমী মাটিতে পদ্মা নদীর পানির মাত্রা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বর্ষাকালের শুরুতেই মেঘনা নদী দ্রুত বন্যার পানিতে ভরে ওঠে এবং বর্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা পূর্ণ অবস্থাতেই বিরাজ করে। এ অববাহিকায় পানি নিষ্ক্রমণের হার কম।  


বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলে পার্বত্য পরিবাহ ক নিষ্ক্রমণ আকাস্মিক বন্যার সৃষ্টি করে। এ অঞ্চলের বন্যা স্বল্প সময়ের জন্য হলেও সংগঠনের হার বা তীব্রতা সম্পর্কে আগের থেকে কিছুই জানা যায় না। বাংলাদেশের এ অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি একই মৌসুমে বেশ কয়েকবার দেখা দিতে পারে।


বাংলাদেশে দক্ষিণ-মধ্য অঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের অধিকাংশ স্থানে জোয়ার-ভাটা, ঝড় ঝঞ্ঝা। জলোচ্ছ্বাস ও পর্যাপ্ত নিষ্ক্রমণ দ্বারা প্রভাবিত। দক্ষিণ-মধ্য অঞ্চল উত্তর আঞ্চলীয় অর্ধ পদ্মা ও লোয়ার মেঘনা নদীর মুখ্য প্লাবনভূমি আর দক্ষিণাঞ্চলীয় অর্ধ হচ্ছে জাল সাদৃশ মোহনাস্থ খাঁড়ি যেগুলোর মধ্য দিয়ে লোয়ার মেঘনার প্রবাহের প্রায় ৪০% সমুদ্রে গিয়ে পড়েছে।


দেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের নিষ্ক্রমণ ব্যবস্থা পদ্মার পলিবেষ্টিত পুরনো শাখা নদী গুলোর মাধ্যমেই প্রধানত চালু আছে। শাখা নদী গুলো প্রায় জমে যাওয়া একটি ব দ্বীপের মাধ্যমে সমুদ্রের সাথে সংযুক্ত। যার ফলে অগভীর বন্যার প্রাদুর্ভাব এ অঞ্চলে খুব বেশি অর্থাৎ বাংলাদেশের এ অঞ্চলে বেশি বন্যা হয়। 


বাংলাদেশের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি ২০২৪

বাংলাদেশ ও ভারতে ২০২৪ সালের বর্ষা মৌসুমে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বাংলাদেশ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে মারাত্মক বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। জুন ও আগস্ট মাসের ভারী বৃষ্টির কারণে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল এবং ভারতের আসাম রাজ্যে বন্যার প্রবণতা দেখা দেয়। ভারতের ত্রিপুরায় আগস্ট মাসে প্রবাল বৃষ্টির কারণে তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। এ বন্যায় ভারত বাংলাদেশকে কোন প্রকার পূর্ববার্তা না দিয়ে গোমতী নদীতে ডুম্বুর বাঁধ সহ কয়েকটি বাঁধ খুলে দেয়। যার ফলে বাংলাদেশের বেশ কিছু অঞ্চল মাঝরাতে পানির নিচে ডুবে যায়। 


দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০শে আগস্ট ২০২৪ বন্যার পানিতে  কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার ৬৫ উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। ২১ আগস্ট কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার অনেক এলাকায় সকাল থেকে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়। এর প্রভাবে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার অধিকাংশ এলাকায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে এবং ফসলি জমি সহ অধিকাংশ সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যায়। 


বাংলাদেশের বাম গণতান্ত্রিক জোট নেতাদের অভিযোগ, পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই ভারতবাদ খুলে দিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী উজানের কোন দেশ নদীর ওপর দেওয়া বাঁধের গেট খুলে দেওয়ার ৭২ ঘণ্টা আগে ভাটির দেশকে জানানোর কথা। কিন্তু ভারত পূর্ব শতকতা ছাড়াই ডুম্বুর বাঁধ  ও কলসি বাঁধ খুলে দিয়েছে। যদিও ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় কুমার বার্মা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস এর সঙ্গে বৈঠকে বলেন, ভারত ডুম্বুর বাঁধ ইচ্ছাকৃত ভাবে খুলে দেয় নি, পানির চাপে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে গিয়েছে।


বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী এবং কুমিল্লা অঞ্চলের মানুষ গত তিন দশকে এমন বন্যার সম্মুখীন হয়নি। বাংলাদেশের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় দশটি জেলার ৬৫ টি উপজেলার ৪৯৫ টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় প্লাবিত এলাকার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক বিঘ্নিত হয়। স্মরণকালের এ বন্যায় প্রায় অর্ধ কোটি মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে এবং তাদের জান মালের চরম বিপর্যয় ঘটেছে। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনোই ঘটেনি।



বাংলাদেশের বন্যার ইতিহাস

বাংলাদেশের বন্যার ইতিহাসে দেখা যায় প্রতি ১০ বছর পর একটি বড় বন্যার সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের বন্যা সাধারণত মৌসুমী ঋতুতে হয়ে থাকে। দেশে প্রতিবছর প্রায় ২৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকার ১৮% বন্যায় প্লাবিত হয়। বাংলাদেশের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা ১৯৮৮ এবং ১৯৯৮ সালে সৃষ্টি হয়। বিশেষভাবে সিলেট অঞ্চলে ১৯৯৯,২০০৪, ২০০৭ , ২০১৮,২০১৯ এবং ২০২০ সালের বন্যা উল্লেখযোগ্য। তবে ২০২২ ও ২০২৪ এর বন্যা ব্যতিক্রম।


২০২২ সালে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা ১২২ বছরের ইতিহাসে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা ছিল। ২০২২ সালের বন্যায় সিলেটের সঙ্গে সড় ক রেল ও আকাশ পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং ফসল ও মানুষের বাড়িঘর রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। যা সরাসরি দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে।


তবে বাংলাদেশের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি ২০২৪ স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা, যা বিগত বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনো ঘটেনি। নোয়াখালী, কুমিল্লা ও ফেনী বন্যা প্রবণ এলাকা না হওয়ায় তাদের উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হয়। গোমতী নদীর ডুম্বুর বাঁধ সহ আরো কিছু বাদের গেট খুলে দেওয়ার ফলে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে এ বন্যার সৃষ্টি হয়। এতে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের মানুষের জনজীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। 


এখনো বাংলাদেশের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি ২০২৪ এর জানমাল ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্দিষ্টভাবে জানা সম্ভব হয়নি। কেননা কুমিল্লা নোয়াখালী ফেনী চট্টগ্রাম এর অধিকাংশ উপজেলা এখনো পানির নিচে তলিয়ে আছে। বর্তমান বন্যা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ প্রশাসনসহ সমন্বয়কারী ছাত্র সংসদ এবং দেশের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক প্রতিষ্ঠান ও জনগণ ত্রাণ ও উদ্ধারকার্যে তৎপর রয়েছে।



বাংলাদেশে বন্যার কারণ

বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক ব দ্বীপ হওয়ায় বাংলাদেশে বন্যার প্রাকৃতিক কিছু কারণ রয়েছে। যা স্বাভাবিকভাবেই বন্যার সৃষ্টি করে।  তবে বাংলাদেশের বন্যার জন্য প্রাকৃতিক এবং মানব সৃষ্ট উভয় কারণ দায়ী। নিম্নে বাংলাদেশের বন্যার কারণসমূহ দেওয়া হল—


১. সাধারণভাবে নিম্ন উচ্চতা বিশিষ্ট ভূসংস্থান যার উপর দিয়ে প্রধান প্রধান নদী প্রবাহিত হয়েছে। নদীগুলো তাদের শাখা প্রশাখা এবং উপনদীর সমন্বয়ে ঘন বিন্যস্ত নিষ্কাশন জালিকা গড়ে তুলেছে। 

২. দেশের বাইরে নদ-নদীর উজান এলাকায় এবং দেশের অভ্যন্তরে ভারী বৃষ্টিপাত। 

৩. পলি সঞ্চয়নের ফলে নদ-নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া , নদীর পার্শ্বদেশ দখল হয়ে যাওয়া এবং ভূমিধ্বস সংঘটন। 

৪. হিমালয় পর্বতে তুষার গলন এবং প্রাকৃতিকভাবে হিমবাহের স্থানান্তর সংঘটন।

৫. জোয়ার ভাটা এবং বায়ু প্রবাহের বিপরীতমুখী ক্রিয়ার ফলে নদ-নদীর সমুদ্রমুখী প্রবাহ ধীরগতি প্রাপ্ত হওয়া। 

৬. সমুদ্রপৃষ্ঠের পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া।  

৭. ভূ-গাঠনিক বিশৃঙ্খলা যেমন— ভূমিকম্প, নদীর প্রবাহ ও ভূরূপতত্ত্বে পরিবর্তন।  

৮. প্রধান প্রধান নদী সমূহে একসঙ্গে পানি বৃদ্ধি এবং এক নদীর উপর অন্য নদীর প্রভাব বিস্তার।


৯. মানবসৃষ্ট কারণ : প্রাকৃতিক কারণ ব্যতীতও মানবসৃষ্ট বেশ কিছু কারণ বন্যার জন্য দায়ী। যেমন— দ্রুত নগরায়ন, বনভূমি উজাড় করা, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং  বিশুদ্ধ পানির চাহিদা বৃদ্ধি প্রভৃতি। 



বাংলাদেশে বন্যার প্রভাব

প্রাকৃতিক কিংবা মানব সৃষ্ট ছোট বড় উভয় বন্যার ক্ষেত্রেই কম বেশি জান ও  মালের কম বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে।যেমন— 


অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি : বন্যার কারণে প্লাবিত অঞ্চলের ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট ও  ফসলি জমি প্রভৃতি নষ্ট হয়। ফলে মানুষ গৃহহীন হয়ে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। দেশের সম্পদের ক্ষতি সাধনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসন ব্যবস্থা করতে বেশ কিছু অর্থ খরচ হয়। 


পরিবেশগত ক্ষতি : বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। যার ফলে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। বন্যার প্রভাবে কৃষি জমির রাসায়নিক পদার্থ পানিতে মিশে গিয়ে পরিবেশের ক্ষতি করে। গাছপালা উপড়ে যাওয়ার ফলে পরিবেশের ভারসম্য নষ্ট হয় এবং নদীর ভাঙ্গন ঘটে। 


মানুষ এবং পশু পাখির ক্ষতি : বন্যার কারণে মানুষ এবং গবাদি পশু ও পাখি মারা যায়। গাছপালা নষ্ট হওয়ার ফলে পাখির আবাসস্থল ধ্বংস হয়। পর্যাপ্ত খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে জনমানুষের পানিবাহিত রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।


স্থানান্তর : বন্যার কারণে আশ্রয়স্থানের জন্য মানুষ এক এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে যায়।  ফলে অন্য এলাকার উপর মানুষের অতিরিক্ত চাপ পড়ায় মানুষ নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়। 


উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস : বন্যার কারণে পানি জমে আবাদি জমি নষ্ট হওয়ায় বন্যার পরপরই ফসল আবাদ করা সম্ভব হয় না। ফলে বন্যার প্রভাবে মানুষের ফসল উৎপাদন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার সমর্থ্য কমে যায়। 

Post a Comment

0 Comments