বঙ্গবন্ধু টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান

বঙ্গবন্ধু টানেল বাংলাদেশ সরকারের মেঘা প্রজেক্ট গুলোর মধ্যে একটি। এটি বাংলাদেশের জন্য আরেকটি মাইলফলক। বঙ্গবন্ধু টানেল চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর নিচে সুরঙ্গ পথ হওয়ায় এটিকে কর্ণফুলী টানের বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ২৮ শে অক্টোবর এই মেগা প্রোজেক্টের শুভ উদ্বোধন করেন। এই টানের মধ্য দিয়ে কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের মানুষের মধ্যে যোগাযোগের নতুনদার উন্মোচিত হয়। 


বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পরীক্ষায় (বিসিএস, প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষক নিবন্ধন এবং  ব্যাংক জব) বাংলাদেশ বিষয়বলি মেঘা প্রজেক্ট থেকে সাধারণ জ্ঞান মূলক প্রশ্ন করা হয়। তাই আজকে আর্টিকেলটি সাজিয়েছি বঙ্গবন্ধু টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান বিষযয়ে।



বঙ্গবন্ধু টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান



বঙ্গবন্ধু টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান

বঙ্গবন্ধু টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান, আদ্যোপান্ত ইতিহাস ও বিস্তারিত তথ্য নিম্নে আলোচনা করা হলো—


মেগা প্রজেক্ট বঙ্গবন্ধু টানেল বা কর্ণফুলী টানেল 

বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে বেশ কিছু মেগা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন। তার মধ্যে বঙ্গবন্ধু টানেল বা কর্ণফুলী টানেল অন্যতম। এটি বাংলাদেশের জন্য অন্যতম মাইলফলক প্রকল্প। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে কর্ণফুলী টানেল বা বঙ্গবন্ধু টানেল মেগা প্রজেক্টটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। 


বঙ্গবন্ধু টানেল বা কর্ণফুলী টানেলটি চট্টগ্রাম শহরের বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে শুরু হয়ে নদীর দক্ষিণ তীরের আনোয়ারা প্রান্তের চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড কারখানার মাঝে মাঝে স্থান দিয়ে গিয়ে নদীর দুই তীরের অঞ্চলকে যুক্ত করেছে। এ সুরঙ্গ পথটির মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক সংযুক্ত হয়। বঙ্গবন্ধু টানেল বা কর্ণফুলী টানেল বাংলাদেশের প্রথম সুরঙ্গ পথ বা টানেল এবং বাংলাদেশের প্রথম দীর্ঘতম সড়ক সুরঙ্গ পথ বা টানেল।



বঙ্গবন্ধু টানেল বা কর্ণফুলী টানেলের আদ্যোপান্ত ইতিহাস

লুসাই পাহাড় থেকে নেমে আসা কর্ণফুলী নদীর উপর তিনটি সেতু নির্মিত হলেও তা যানবাহন চলাচলের জন্য যথেষ্ট নয়। নদীর মরফলজিক্যাল বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীর তলদেশে পলি জমা চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যকারিতার জন্য একটি বড় সমস্যা ও হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্যার নিরসন করতে কর্ণফুলী নদীর উপর আর কোন সেতু নির্মাণ না করে এর তলদেশে সুরঙ্গ পথ বা টানেল নির্মাণ করা প্রয়োজন মনে করে সরকার চট্টগ্রাম জেলার দুই অংশকে সংযুক্ত করার জন্য নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।


প্রথম প্রস্তাব

২০০৬ সালের ২৪ শে জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের এক সভায় কর্ণফুলী নদীর দুই প্রান্তকে যুক্ত করার জন্য বঙ্গবন্ধু টানেল বা কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের প্রথম প্রস্তাব পেশ করেছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। 


স্মারক স্বাক্ষর

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানের নির্মাণের জন্য ২০১৪ সালের ১০ই জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বেইজিংয়ের চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (CCCC) -এর সাথে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। 


একনেকের অনুমোদন ও খননকাজ

বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেক ২০১৫ সালের ১৭ই জুন কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেয়। এবং ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর টানেল নির্মাণটির খননকাজ শুরু হয়। 


বঙ্গবন্ধু টানেল নামকরণের প্রস্তাব

চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ২০১৯ সালের ২১ শে জানুয়ারি, একাদশ জাতীয় সংসদের নবগঠিত মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে কর্ণফুলী টানেল টি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নামকরণের প্রস্তাব পেশ করেন।


বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন

বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ শে ফেব্রুয়ারি কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে সুইট টিপে আনুষ্ঠানিকভাবে খনন কাজের শুভ উদ্বোধন করেন। এবং ২০২৩ সালের ২৮ শে অক্টোবর, শনিবার ,চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর নিচে নির্মিত মেগা প্রজেক্ট বঙ্গবন্ধু টানেল বা কর্ণফুলী টানেল শুভ উদ্বোধন করেন।


অর্থায়ন

টানের নির্মাণ ব্যয় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। বঙ্গবন্ধু টানেল বা কর্ণফুলী টানেলের অর্থায়ন করে বাংলাদেশ সরকার (৪৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা) এবং চুক্তি অনুযায়ী চীনের এক্সিম ব্যাংক ২০ বছর মেয়াদী ঋণ হিসেবে ২ শতাংশ সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা (৫৯১৩ কোটি টাকা)। ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং -এর ঢাকা শহরে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। 



বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ শুরু হয় কবে?

২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু টানেলের খননকাজ শুরু হয়। ২০১৬ সালের ১৪ই অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ শে ফেব্রুয়ারি কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে সুইট টিপে আনুষ্ঠানিকভাবে খনন কাজের শুভ উদ্বোধন করেন। টানেলের বা সুরঙ্গের বিভিন্ন অংশ চীনের ঝেনজিয়াংয়ে উৎপাদন করে বাংলাদেশ আনা হয়। এটি ২০২২ সালের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২৩ সাল পর্যন্ত নির্মাণ কাজ অব্যাহত ছিল। 



বঙ্গবন্ধু টানেলের ইংরেজি অপর নাম কি?

কর্ণফুলী টানেল বা বঙ্গবন্ধু টানেলের ইংরেজি অপর নাম হল— Two towns - one city. এটি চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের দুই শহরকে যুক্ত করে। 



বঙ্গবন্ধু টানেল কত কিলোমিটার?


বঙ্গবন্ধু টানেলের মূল দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার। এর সঙ্গে সংযোগ সড়ক যুক্ত ৫.৩৫ কিলোমিটার। প্রতি টিউবের প্রস্থ ৩৫ ফুট এবং উচ্চতা ১৬ ফুট। দুটি টিউবের মধ্যবর্তী ব্যবধান ১১ মিটার। সর্বোচ্চ গভীরতা ১৫০ মিটার।বঙ্গবন্ধু টানেলের যানবাহন চলাচল ক্ষমতা প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৮০০০টি।


বঙ্গবন্ধু টানেল এর টোল কত?

বঙ্গবন্ধু টানেল বা কর্ণফুলী টানেলের যানবাহনের ধরন অনুযায়ী যে টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছে— 


যানবাহন প্রতি টোল হার

ব্যক্তিগত গাড়ি বা পিকআপ ট্রাক — ২০০ টাকা

মাইক্রোবাস — ২৫০ টাকা

বাস (৩১ আসনের নিচে) — ৩০০ টাকা

বাস (৩২ আসনের অধিক) — ৪০০ টাকা

বড় বাস (ত্রিএক্সএল) —  ৫০০ টাকা

ট্রাক (৫ টন পর্যন্ত) — ৪০০ টাকা

ট্রাক (৮ টন)  — ৫০০ টাকা

ট্রাক (১১ টন)  — ৬০০ টাকা

ত্রিএক্সএল ট্রেলার  — ৮০০ টাকা

ফোরএক্সএল ট্রেলার  — ১০০০ টাকা

এক্সএল প্রতি অতিরিক্ত চার্জ  — ২০০ টাকা। 



বঙ্গবন্ধু টানেল এর প্রস্থ কত?

বঙ্গবন্ধু টানেলর প্রতি টিউবের প্রস্থ ৩৫ ফুট এবং উচ্চতা ১৬ ফুট। দুটি টিউবের মধ্যবর্তী ব্যবধান ১১ মিটার। 

Post a Comment

0 Comments