মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর

মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলা মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি অবস্থিত। এটি বাংলাদেশ সরকারের মেগা প্রজেক্ট এরমধ্যে একটি। মাতার বাড়ি সমুদ্র বন্দর বাংলাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প। এটি বঙ্গোপসাগরের তীরস্থিত নির্মাণাধীন একটি সমুদ্র বন্দর। আজকে আর্টিকেল সাজানো হয়েছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর এর বিস্তারিত বিষয় নিয়ে।


মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর



মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর

বাংলাদেশ সরকার কক্সবাজার জেলা মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি বাংলাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ২০২০ সালের ১০ই মার্চ একনেক মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের অনুমোদন দেন। ২০২০ সালের ১৬ই নভেম্বর মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। 


মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় প্রথম ধাপে বন্দর ও পণ্য পরিবহনের জন্য সড়ক নির্মাণসহ ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি থেকে ২০ হাজার কোটি।এরমধ্যে প্রকল্প সাহায্য৬৭৪২.৫৬৭৯ কোটি টাকা। নিজস্ব অর্থ ২২১৩.২৪৯৪ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ৮৯৫৫.৮১৭৩ কোটি টাকা।


উন্নয়ন সহযোগী জাপানি দাতা সংস্থা জাইকার  অর্থায়নে মাতারবাড়ির কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির উপকরণ আনার জন্য তিনটি জেটি তৈরি করার সময় সমুদ্র বন্দর তৈরীর সম্ভাব্যতা যাচাই করা শুরু হয়। জাইকা ২০১৬ সালে একটি সমীক্ষা করে তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। সেখান থেকে জানা যায় তিনটি জেটির সঙ্গে যে চ্যানেলটি আছে সেটিকে ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে বন্দর তৈরির  সম্ভাবনা রয়েছে। 

এ জরিপের পরিপ্রেক্ষিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ওই অঞ্চলের সমুদ্র বন্দর তৈরি সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করে এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। 


২০২০ সালের ১০ই মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) বন্দর নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছিলেন। অনুমোদনের পর, ২০২০ সালের জুলাই মাসে টার্মিনালের নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। ২০২০ সালের ১৬ই নভেম্বর মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের নির্মাণ কাজ শুরু হয়।মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর মাসে। 



মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর সাধারণ জ্ঞান

জেটি নির্মাণ

প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দরে ৩০০ ও ৪৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের দুটি টার্মিনাল থাকবে। এর একটি হবে বহুমুখী টার্মিনাল, অপরটি কন্টেইনার টার্মিনাল। এছাড়া, বন্দরের সাথে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। একসঙ্গে আট হাজার কন্টেইনারবাহী জাহাজ বন্দরের ভিড়তে পারবে।


বাংলাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দরের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কে?

বাংলাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হল কনসার্টিয়াম, জাপান।


মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের মালিক কে?

মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের মালিক চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।


মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে উন্নয়ন সহযোগী কে?

মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে উন্নয়ন সহযোগী জাপানি দাতা সংস্থা জাইকা। ঋণ হিসেবে জাপান থেকে সংগ্রহ করা হয় ১২ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা। 


মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের গভীরতা কত?

২০১৮ সালের ২৯ শে নভেম্বর নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের গভীরতা ১৬ মিটার।


বাংলাদেশের প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দর কোনটি?

বাংলাদেশের প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দর হল 'মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর'। এটি চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলা মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি অবস্থিত।



মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

কনটেইনারে সাশ্রয়

চট্টগ্রাম বন্দরের তুলনায় মাতারবাড়ি সমুদ্রপথে প্রতি ২০ ফুট লম্বা কন্টাইনারে খরচ সাশ্রয় হবে ১৩১ ডলার এবং ৪০ ফুটের কন্টেইনারে সাশ্রয় হবে ১৯৭ ডলার।


পণ্য খালাসে কম জাহাজের প্রয়োজন হবে

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের হিসাব মতে, ২০২০ সালে ১ হাজার ৩৭৮ টি জাহাজে ২৬ লাখ কন্টেইনার আনা নেয়া হয়েছে। গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের ফলে এই পরিমাণ কনটেইনার পরিবহনে ১৬১ থেকে ২০০ টি জাহাজ প্রয়োজন হবে। 


চট্টগ্রাম বন্দরের উপর চাপ হ্রাস

চট্টগ্রাম বন্দরে দেশের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের ৯২ ভাগ সম্পন্ন হয়। এতে বন্দরের চারটি টার্মিনার সম্পূর্ণভাবে ব্যবহৃত হয়। ফলে এই বন্দরে পণ্য আনোনিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করার কোন উপায় নেই। তাই চট্টগ্রাম বন্দরের উপর চাপ কমাতে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।


পণ্য খালাসে সময় হ্রাস

চীন থেকে আশা জাহাজের পণ্য খালাস করতে প্রথমে জাহাজ থেকে লাইটারে এবং পরে লাইটার থেকে জেটিতে আনা হয়। ফলে তিন মাসের মত সময় লেগে যায়।মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ হলে মাতার বাড়িতে জাহাজ থেকে সরাসরি বন্দরে পণ্য ফালাস করানো যাবে। যার ফলে পণ্য খালাসে সময় এক তৃতীয়াংশ হ্রাস পাবে।

Post a Comment

0 Comments