কাজী নজরুল ইসলামের মতে কোনটি আমাদের নিষ্ক্রিয় করে দেয়

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ( ১৮৯৯ – ১৯৭৬) এর জীবন ছিল সাহিত্যের মতো বিচিত্র আর বহুবর্ণিল। কাজী নজরুল ইসলামের জীবন কোন নিয়মের জালে আটকা ছিল না। যখন যা ভালো লাগতো, তিনি তাই করতেন। তার সাহিত্য লেখার জন্য বিশেষ কোনো পরিবেশের প্রয়োজন হতো না। বিশ্বাস করতেন যে, মানুষকে তার নিজের পথ নিজেকে নির্ধারণ করতে হবে এবং নিজেকে নিজের কর্ণধার হতে হবে। যা আমাদের নিষ্ক্রিয় করে দেয় তা আঁকড়ে ধরে জীবন চলা যাবে না। 


আমাদের আজকে আর্টিকেলে 'আমার পথ' প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলামের মতে কোনটি আমাদের নিষ্ক্রিয় করে দেয় সে বিষয়ে আলোচনা করব। 



কাজী নজরুল ইসলামের মতে কোনটি আমাদের নিষ্ক্রিয় করে দেয়



কাজী নজরুল ইসলামের মতে কোনটি আমাদের নিষ্ক্রিয় করে দেয়

কাজী নজরুল ইসলামের 'আমার পথ' প্রবন্ধটি 'রুদ্রমঙ্গল' প্রবন্ধ সংকলন থেকে নেয়া হয়েছে। এ প্রবন্ধে লেখকের নিজের জীবন দর্শন ও আদর্শের স্বরূপ ফুটে উঠেছে।'আমার পথ' প্রবন্ধের মাধ্যমে কাজী নজরুল ইসলাম ব্যক্তি সত্তাকে জাগ্রত করতে চেয়েছেন। 


তিনি মনে করেন, পরাবলম্বন মানুষকে নিস্তেজ করে ফেলে; তাই যত দ্রুত সম্ভব পরাবলম্বন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কেননা নিজের আত্মাকে চিনলে আত্মনির্ভরতা আসে- আত্মনির্ভরতার কারণে মানুষ অসাধ্যকে সাধন করতে পারে। 


কাজী নজরুল ইসলাম মনে করেন পরাবলম্বন আমাদের নিষ্ক্রিয় করে দেয়। কেননা নিজে নিষ্ক্রিয় থেকে অন্য কোন মহাপুরুষকে প্রাণপণে ভক্তি করলেই দেশ উদ্ধার হবে না। অন্তরে গোলামীর ভাব থাকলে বাইরের গোলামির ভাব থেকে রেহাই পাওয়া যায় না। 


আত্মাকে চিনলে আত্মনির্ভরতা আসে। কখনোই ভুলের মধ্য দিয়ে সত্যকে পাওয়া যায় না। কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্বাস করেন, আমরা সেদিন স্বাধীন হব, যেদিন সত্যি সত্যি আমাদের আত্মনির্ভরতা আসবে। নিজের প্রতি বিশ্বাস না রেখে মহাপুরুষ গান্ধীজীর ওপর নির্ভর করায় ভারতের স্বাধীনতা অর্জন বিলম্বিত হয়েছিল। এতে স্পষ্টই বোঝা যায়, আত্মনির্ভরতার অভাবই পরাধীনতার কারণ হিসেবে বিবেচ্য। কাজী নজরুল ইসলামের মতে পরাবলম্বন আমাদের নিষ্ক্রিয় করে দেয়।



আমার পথ প্রবন্ধের মূলভাব

আমার পথ প্রবন্ধের মূলভাব : কাজী নজরুল ইসলামের 'রুদ্রমঙ্গল' প্রবন্ধ সংকলন থেকে নেওয়া 'আমার পথ' প্রবন্ধে ব্যক্তিত্ববোধে উজ্জীবিত আত্মমর্যাদাবাধি আত্মনির্ভরশীল ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী প্রাবন্ধিক প্রথমত ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষের জাগরণ প্রত্যাশা করেছেন। আত্মনির্ভরশীলতায় উজ্জীবিত মানুষ যদি নির্ভয়ে যথার্থ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে তবে এই ব্যক্তি থেকে সমষ্টিতে সচেতনতার ধারাবাহিকতা উজ্জীবিত হবে। 



মহাত্মা গান্ধী যখন ভারতের মানুষকে স্বাধীনতার জন্য সচেতনতার ডাক দিয়েছেন তখনও মানুষ গান্ধীজীর ওপরে নির্ভর করে নিজেরা অচেতন অলস হয়ে থেকেছেন।  কারণ তখন পরাধীন ভারতবর্ষে আত্মবিশ্বাসী হয়ে আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন মানুষের খুবই অভাব ছিল। তাই প্রাবন্ধিক মনে করেন, পরাবলম্বন মানুষকে নিস্তেজ করে ফেলে; তাই যত দ্রুত সম্ভব পরাবলম্বন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।কেননা নিজের আত্মাকে চিনলে আত্মনির্ভরতা আসে- আত্মনির্ভরতার কারণে মানুষ অসাধ্যকে সাধন করতে পারে। 


কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন একজন অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রাণপুরুষ। তিনি ধর্মের নামে বিভেদ সৃষ্টি করাকে নিছক ভন্ডামি ও অনুচিত মনে করতেন। এবং তিনি বিশ্বাস করতেন, সকল ধর্মের মানুষকে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।নজরুল ইসলাম বলেছেন, 'আমার কর্ণধার আমি নিজেই। আমার পথ দেখাবে আমার সত্য'। এই উক্তির মধ্য দিয়েই আত্মচেতনা ও আত্ম মহিমার প্রতি গুরুত্বের কথা জনসম্মুখে জানান দেন। 


কাজী নজরুল ইসলামের মতে, নিজের সত্য হচ্ছে, নিজের গুরু। মানুষ অতি বিনয় দেখাতে গিয়ে নিজের সত্যাকে অস্বীকার করে ফেলে, যার দরুন এই বিনয় মানুষকে ছোট করে ফেলে। সুতরাং নিজের সত্যকে উদঘাটন করার জন্য অতি বিনয় ভাবকে বর্জন করতে হবে। 



আমার পথ প্রবন্ধ অনুসারে লেখককে কে তার পথ দেখাবে?

'আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক যাত্রার শুরুর আগে সত্যকে সালাম জানিয়েছেন। অন্তরে মিথ্যের ভয় না থাকলে বাইরের কোন ভয়ই কিছু করতে পারবেনা।তিনি বলেছেন, 'আমার পথ দেখাবে আমার সত্য।' এ উক্তিতে প্রাবন্ধিক তার আত্মবিশ্বাসী মানসিকতাই যে তাকে তার কর্ণধার হয়ে পথ দেখাবে এটাই বুঝিয়েছেন। তার বিশ্বাস সত্য সব অসৎ শক্তিকে পরাজিত করে মানুষকে পূর্ণতার পথে নিয়ে যায়।



'আমার পথ' প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম মূলত গান্ধীজীর উপর নির্ভর করে নিজেদের অচেতন অবস্থা অর্থাৎ পরাবলম্বন যে মানুষকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়, আত্মনির্ভরতা, অসাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা এবং মিথ্যাকে পুঁজি না করে নিজের সৎ থেকে নির্ভীক অগ্রসর হয়ে একটি আদর্শ সমাজ গঠন ও রাষ্ট্র তৈরীর ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি এমন একটি রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছেন যে রাষ্ট্রে ধর্ম-বর্ণের ভিত্তিতে কোন তফাৎ থাকবেনা এবং প্রত্যেকেই হবে আত্মনির্ভরশীল। কেননা পরাবলম্বন আমাদের নিষ্ক্রিয় করে দেয়।

Post a Comment

0 Comments