ডাক্তাররা কত বছর পর্যন্ত বিসিএস দিতে পারবে

বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের ডাক্তাররা কত বছর পর্যন্ত বিসিএস দিতে পারবে এবং বাংলাদেশে একজন বিসিএস ক্যাডার ডাক্তারের বেতন কত সে বিষয়ের উপর আজকের আর্টিকেলে তুলে ধরা হয়েছে। 


কেননা অনেকেরই এ বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে যে একজন বিসিএস ক্যাডার ডাক্তার কত টাকা বেতন পান এবং স্বাস্থ্য ক্যাডারে আবেদনের জন্য নতুন আইন অনুযায়ী একজন ডাক্তার কত বছর বয়স পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন সে সকল তথ্য নিয়ে আজকের আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে।



ডাক্তাররা কত বছর পর্যন্ত বিসিএস দিতে পারবে



ডাক্তাররা কত বছর পর্যন্ত বিসিএস দিতে পারবে

উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশেষ স্বাস্থ্য ক্যাডারের ডাক্তাররা ৩২ বছর বয়স পর্যন্ত বিসিএস দিতে পারবে। বিসিএস সহ সকল সরকারি চাকরি প্রত্যাশীদের বয়সসীমা ৩০ থেকে বৃদ্ধি করে ৩২ বছর করা হলেও স্বাস্থ্য ক্যাডারের অর্থাৎ ডাক্তারদের বয়সসীমা এখনো বাড়ানো হয়নি। 


পূর্বে বিশেষ কোটা ব্যতীত সকলের চাকরিতে প্রবেশের বয়স ছিল ৩০ বছর এবং বিশেষ কোটাধারী যেমন - স্বাস্থ্য ক্যাডার বা চিকিৎসক বা ডাক্তার, মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, উপজাতি, অনগ্রসর জনগণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিসিএস ও অন্যান্য চাকরিতে অংশগ্রহণের জন্য বয়সসীমা ছিল ৩২ বছর। 


নতুন সিদ্ধান্তে স্বাস্থ্য ক্যাডার বা ডাক্তারদের জন্য বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বয়সসীমা বাড়ানো হয়নি। সবার জন্য একই বয়সসীমার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন ( Bangladesh Public Service Commission) অর্থাৎ বিপিএসসির চেয়ারম্যান ডঃ মোবাশ্বের মোনেম জানিয়েছেন, সরকার চাইলে স্বাস্থ্য ক্যাডারদের বা চিকিৎসকদের বয়সসীমা বাড়াতে পারেন। 


কেননা একজন ডাক্তার বা চিকিৎসক এমবিবিএস শেষ করে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য গড়ে মোট আট বছর সময় পান। যেখানে অন্য সকল সাধারণ চাকরি প্রত্যাশীরা স্নাতক সম্মান সম্পন্ন করার পরে ১০ বছর সময় পান। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার চাইলে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের ডাক্তারদের বয়সসীমা আরো বাড়াতে পারেন। 


৪৭ তম বিসিএস এর আগে এ পর্যন্ত সব সাধারণ বিসিএস প্রার্থীদের বয়সসীমা ছিল ৩০ বছর এবং স্বাস্থ্য ক্যাডার বা ডাক্তারদের বয়সসীমা ছিল ৩২ বছর। কারণ সাধারণ শিক্ষার ক্ষেত্রে অর্থাৎ স্নাতক (অনার্স) সম্পন্ন করতে চার বছর সময় লাগে।


অন্যদিকে ডাক্তারদের স্নাতক (এমবিবিএস) সম্পন্ন করতে সময় লাগে ৬ বছর।ডাক্তারদের এই সেক্রিফাইস বিশেষ বিবেচনায় নিয়েই পূর্বে সাধারণ প্রার্থীদের তুলনায় ডাক্তারদের দুই বছর বয়স বেশি করা হয়েছিল। 


কিন্তু বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ সাধারণ চাকরিপ্রার্থী সহ কোটাধারী সকলের চাকরিতে বয়সসীমা ৩২ রাখায় ডাক্তাররাও বিসিএসে ৩২ বছর বয়স পর্যন্ত আবেদন করার সময় পাবেন। সম্প্রতি ৪৭ তম বিসিএসে অন্য সকলের মত স্বাস্থ্য ক্যাডারেও আবেদনের বয়স সীমা ৩২ বছর রাখা হয়েছে। এখানে এমবিবিএস ডাক্তারদের ক্ষেত্রে কোন সুযোগ দেওয়া হয়নি। 


ফলে চিকিৎসকরা বা ডাক্তাররা বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে ডাক্তারদের বয়সসীমা ৩৪ করার জন্য আন্দোলন করেন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করার আহ্বান জানান। 


এ বিষয়ে গণমাধ্যম পিএসসি চেয়ারম্যান ডঃ মোবাশ্বের মোনেম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ৪৭ তম বিসিএস এর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে স্বাস্থ্য ক্যাডারের বয়স সীমার বিষয়টি আলোচনা রাখা হয়নি। ফলে স্বাস্থ্য ক্যাডার অর্থাৎ চিকিৎসকদের জন্য আবেদনের বয়সসীমা ৩২ বছর অর্থাৎ আগের বয়স সীমাই রাখা হয়েছিল, কিন্তু সেটি সবার জন্যই এখন প্রযোজ্য।


এছাড়া আপনি আরো কিছু তথ্য জানান, তিনি বলেন, সাধারণত আমরা ১৮ বছর বয়সে আন্ডার গ্রাজুয়েট শুরু করি। সাধারণ শিক্ষার ক্ষেত্রে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করতে চার বছর সময় লাগে, কিন্তু চিকিৎসকদের গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করতে ৬ বছর সময় লাগে। তারা ডাক্তার হওয়ার জন্য এই সেক্রিফাইসটি করেন। 


৩২ বছর বয়স পর্যন্ত যত খুশি ততবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।ফলে আমার কাছে মনে হয়, এটি সবাইকে উদ্দেশ্য করেই করা হয়েছে। এখানে তো চিকিৎসকদের বয়স কমিয়ে দেয়া হয়নি, তাদের বয়স সীমা ৩২ বছরই আছে। 


পিএসসি চেয়ারম্যান আরো বলেন, চিকিৎসকরা বা ডাক্তাররা এমবিবিএস পাস করেন ঘরে ২৪ বছর বয়সে। ২৪-৩২ ঘরে আজ বছর সময় তারা পেয়ে থাকেন। তিনি পালটা প্রশ্ন করে বলেন, আট বছর সময় ধরে আপনি চাকরিতে চেষ্টা করবেন এর চেয়ে বেশি আপনাকে দেওয়া হবে কেন? তার কাছে এটি তেমন যুক্তিযুক্ত নয়। 


সাংবাদিকরা পিএসসি চেয়ারম্যান এর কাছে অন্যরা বেশি সময় পাচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডাক্তারদের পড়ার ধরনটি আলাদা। যদি সরকার মনে করে এটা বিবেচনায় নেয়া দরকার, তাহলে সেটা হতে পারে। তবে ব্যক্তিগতভাবে সবার জন্য ৩২ বছর সময়সীমা রাখাকে তিনি বৈষম্য বলে মনে করেন না। 


এক একটি পড়াশোনার ধরন একেক রকম। ডাক্তাররা জেনে শুনেই তারা এমবিবিএস পড়াশোনা করতে আসেন। তারা এটা জেনেই আসে যে এখানে শুধু আত্মীয় পড়াশুনা হয় না, এর পাশাপাশি প্রাক্টিক্যালও পড়াশোনা করতে হয়। 



বাংলাদেশে একজন বিসিএস ক্যাডার ডাক্তারের বেতন কত

বাংলাদেশে একজন বিসিএস ক্যাডার ডাক্তার অন্য সকল ক্যাডারদের মতোই জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী ৯ম গ্রেডের বেতন নিয়োগ পেয়ে থাকেন। ৯ম গ্রেডের বেসিক বা মূল বেতন স্কেল ২২,০০০-৫৩০৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত ধরা হয়। 



ডাক্তাররা কত বছর পর্যন্ত বিসিএস দিতে পারবে



চাকরিতে প্রবেশের শুরুতে অতিরিক্ত একটি ইনক্রিমেন্ট পেয়ে তাদের মূল বেতন ২৩,১০০ টাকায় দাঁড়ায়।  এর সাথে তিনটি ইনক্রিমেন্ট পেলে তাদের মূল বেতন বৃদ্ধি পেয়ে ২৫ হাজার টাকা হয়। 


অন্য ক্যাডারদের মত স্বাস্থ্য ক্যাডারের ডাক্তাররাও চাকরির শুরুতে মূল বেতনের 5% একটি ইনক্রিমেন্ট পেয়ে তাদের বেতন দাঁড়ায় ২৩,১০০ টাকা। তবে টেকনিক্যাল ক্যাডার যেমন - কৃষি বা সাধারণ শিক্ষা, চিকিৎসক এবং ইঞ্জিনিয়ার ক্যাডারদের যদি অনার্স বা মাস্টার্স প্রথম শ্রেণী থাকে তাহলে তারা আরো একটি ইনক্রিমেন্ট পায়। 



এতে তাদের বেতন হয় ২৪,২৫৫ টাকা কিন্তু রাউন্ড ফিগার হিসেবে ২৪ হাজার ২৬০ টাকা দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু অনার্স এবং মাস্টার্স সার্টিফিকেট দুটোতেই দ্বিতীয় শ্রেণীর রেজাল্ট থাকলে তাদেরকে একটি ইনক্রিমেন্ট অর্থাৎ মূল বেতনের ৫% দেওয়া হয়। 



এই বেসিক বা মূল বেতনের সাথে আরো যোগ হয় - চিকিৎসা ভাতা, বাড়ি ভাড়া, ও শিশু শিক্ষা ভাতা ইত্যাদি। তবে এক্ষেত্রে বাড়িভাড়া কত পারসেন্ট হবে তা কর্মস্থলের উপর নির্ভর করে। 


যদি ক্যাডারের পোস্টিং ঢাকায় হয় তাহলে মূল বেতন স্কেলের ৫৫ % হারে ১২,৭০৫ টাকা, ঢাকার বাইরে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কর্মস্থল হলে মূল বেতনের ৪৫ % হারে ১০,৩৯৫ টাকা, এবং উপজেলায় কর্মস্থল হলে মূল বেতন স্কেলের ৪০% হারে ৯২৪০ টাকা বাড়ি ভাড়া ক্যাডারগণ পেয়ে থাকেন।



ডাক্তারসহ অন্যান্য বিসিএস ক্যাডারগণ ১৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পেয়ে থাকেন। শিশু শিক্ষা ভাতা সন্তান প্রতি ৫০০ টাকা পেয়ে থাকেন। তবে দুটি সন্তানের অধিক সন্তান থাকলে তাদের জন্য কোন ভাতা দেওয়া হয় না অর্থাৎ তারা একটি সন্তান থাকলে ৫০০ টাকা এবং দুটি সন্তান থাকলে মোট ১০০০ টাকা শিশু শিক্ষা ভাতা পেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে নিঃসন্তান ক্যাডার কোন শিশু শিক্ষা ভাতা পাবেন না। 



তবে বিসিএস ক্যাডার ডাক্তার কিংবা অন্যান্য ক্যাডাররা চাকরিতে প্রবেশের সাথে সাথে কারি কারি টাকা না পেলেও চাকরিতে জয়েন্ট করার অনেক বছর পর ইনক্রিমেন্ট এবং প্রমোশন পেতে পেতে বেতন স্কেল লক্ষ টাকায় পৌঁছায়। 


জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী নবম গ্রেডে একজন বিসিএস ক্যাডার মোট ১৮ টি ইনক্রিমেন্ট পেয়ে থাকেন। এই ইনক্রিমেন্ট বিসিএস ক্যাডার চাকরিতে প্রবেশের পরে প্রতি বছরে জুলাই মাসে বেসিক বেতনের সাথে অর্থাৎ মূল বেতন স্কেলের ৫% হারে বেতন বৃদ্ধি করা হয়। 



একজন বিসিএস ক্যাডারের এই ১৮ বছরের ইনক্রিমেন্ট শেষে তার মূল বেতন দাঁড়ায় ৫৩ হাজার ৬০ টাকা। এর সাথে বেসিক বেতন হারে বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও শিশু শিক্ষা ভাতা যোগ করে সর্বমোট বেতন দাঁড়ায় ৭৫ হাজারেরও বেশি।



এছাড়াও বিসিএস ক্যাডার হিসেবে চাকরিতে প্রবেশের পাঁচ বছর পর একজন বিশেষ ক্যাডার পদোন্নতি বা প্রমোশন পাওয়ার উপযুক্ত হন। তারা প্রমোশন পেয়ে নবম গ্রেড থেকে চতুর্থ বা তৃতীয় গ্রেডে আসার সুযোগ পেয়ে থাকেন। 



এতে তাদের বেসিক বা মূল বেতন স্কেল বৃদ্ধি পায় এবং এর পাশাপাশি মূল বেতন স্কেল অনুযায়ী ইনক্রিমেন্ট ও ভাতা সমূহ যেমন বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও শিশু শিক্ষা ভাতা ইত্যাদি যোগ করলে একজন বিশেষ ক্যাডারের বেতন লক্ষ টাকায় পৌঁছে যায়। 




বিসিএস ডাক্তার হওয়ার বয়সসীমা কত

৪৭ তম বিসিএস এর বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, স্বাস্থ্য ক্যাডারে ১,৩৬১ জন ডাক্তারের পদ রয়েছে। এ বিজ্ঞপ্তিতে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য অন্য সকল ক্যাডারের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩২ বছর করা হলেও ডাক্তারদের জন্য দু'বছর বয়সসীমা বাড়িয়ে আলাদা কোন সুযোগ রাখা হয়নি। 


সম্প্রতি বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে দেশের স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসকদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আরও ২,০০০ চিকিৎসক বা ডাক্তার নিয়োগের কথা জানা যায়। তবে এটি ৪৮ তম বিশেষ বিসিএস এর মাধ্যমে নেওয়া হবে কিনা তা এখনো জানা যায়নি।


প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সাইদুর রহমান (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়) জানান, বিশেষ বিসিএস এর মাধ্যমে চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 


ডাক্তাররা কত বছর পর্যন্ত বিসিএস দিতে পারবে



তিনি আরো জানান, বর্তমানে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণে চিকিৎসকদের বয়স সীমা ৩২ বছর রয়েছে। বিসিএস পরীক্ষায় চিকিৎসকদের অংশগ্রহণের  বয়সসীমা দুই বছর বৃদ্ধি করে ৩৪ বছর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। 


অধ্যাপক সাইদুর রহমান আরো বলেন, বিগত সরকারের আমলে চিকিৎসকরা বেতন ভাতা ও বিভিন্ন দিক থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। দীর্ঘদিনের বঞ্চিত হওয়ার ক্ষোভের কারণে চিকিৎসকরা ধর্মঘট করেন এবং এতে তাদের দাবিদাওয়া  তুলে ধরেন। 


বর্তমান সরকার তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্তরিক। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিছু সিদ্ধান্তের মাধ্যমে চিকিৎসকদের দাবি-দাওয়া পূরণ করার চেষ্টা করবে। 



আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে, স্বাস্থ্য ক্যাডার অর্থাৎ চিকিৎসকদের বা ডাক্তারদের বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য বয়সসীমা দুই বছর বাড়িয়ে সরকার ৩৪ বছর করতে পারেন।

Post a Comment

0 Comments