স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরী পরিবার পরিচিতি নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।স্যামসন এইচ চৌধুরী ১৯৫৮ সালে চার বন্ধু মিলে স্কয়ার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১২ সালে স্যামসন এইচ চৌধুরী মৃত্যুর পর থেকে স্যামসন এইচ চৌধুরী পরিবার স্কয়ার গ্রুপ কে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।বর্তমানে স্কয়ার গ্রুপের সকল সাইট স্যামসন এইচ চৌধুরী পরিবার পরিচালনা করছেন। স্যামসন এইচ চৌধুরী পরিবার নিয়ে অনেকেই জানার কৌতুয়া রয়েছে।
তাই আমরা আজকে আর্টিকেলটি সাজিয়েছি স্যামসন এইচ চৌধুরী পরিবার — স্কয়ার মাতা অনিতা চৌধুরী, স্যামুয়েল এস চৌধুরী, তপন চৌধুরী স্কয়ার, স্কয়ার গ্রুপের অঞ্জন চৌধুরী, রত্না পাত্র সম্পর্কে তথ্য নিয়ে।
স্যামসন এইচ চৌধুরী পরিবার
শিক্ষা ও কর্মজীবন
স্কয়ার মাতা অনিতা চৌধুরী
স্যামুয়েল এস চৌধুরী
স্যামসন এইচ চৌধুরী পরিবার -এর জেষ্ঠ্য সন্তান স্যামুয়েল এস চৌধুরী ওরফে স্বপন চৌধুরী। তিনি ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি পিতা স্যামসন এইচ চৌধুরীর মৃত্যুর পর ৮ মার্চ দেশের অন্যতম প্রধান ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্কয়ার গ্রুপের নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়।
পূর্বে স্যামুয়েল বাবার গড়া প্রতিষ্ঠানে ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। স্কয়ার গ্রুপের বর্তমান চেয়ারম্যান হলেন স্যামুয়েল চৌধুরী এছাড়াও ফার্মাসিউটিক্যালসেরও চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
তপন চৌধুরী স্কয়ার
স্যামসন এইচ চৌধুরী পরিবার -এর মেজ সন্তান তপন চৌধুরী। তপন চৌধুরী স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল ও স্কয়ার হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বাংলাদেশের একজন সফল ব্যবসায়ী। এছাড়াও তার আরো একটি পরিচয় রয়েছে।
তপন চৌধুরী ২০০৭ সালের ১৪ জানুয়ারি ফখরুদ্দিন আহমেদের অধীনে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা পদে নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে তিনি ২০০৮ সালের ৮ জানুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
শিক্ষা ও কর্মজীবন
স্যামসন এইচ চৌধুরী পরিবার -এর মেজ ছেলে তপন চৌধুরী পাবনার আতাইকুলায় জন্মগ্রহণ করেন।তিনি বগুড়ার খঞ্জনপুর বোর্ডিং স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে পাবনায় চলে আসেন এবং পাবনা জেলা স্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন ঢাকার নটর ডেম কলেজে। উচ্চমাধ্যমিক শেষে উচ্চশিক্ষার জন্য চলে যান যুক্তরাজ্যে। বাবা স্যামসন এইচ চৌধুরীর অসুস্থতার কারণে ১৯৭৭ সালে তপন চৌধুরী দেশে ফিরে আসেন।
দেশে ফিরে তপন চৌধুরী স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল্স লিমিটেডের এবং স্কয়ার টেক্সটাইল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কর্মজীবনে তপন চৌধুরী মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি ছিলেন।
তিনি ইয়াং ম্যান ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসোসিয়েশন (ওয়াএমসিএ) এর সভাপতি হিসাবেও যুক্ত ছিলেন এবং বাংলাদেশ ব্যাপটিস্ট ফেলোশিপের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তপন চৌধুরী বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স এসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যও ছিলেন।
তপন চৌধুরী অন্যান্য পদ স্কয়ার টয়লেটরিজ লিমিটেড, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, কন্টিনেন্টাল হসপিটাল লিমিটেড এবং আরও কয়েকটি সংস্থার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে তিনি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল ও স্কয়ার হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
স্কয়ার গ্রুপের অঞ্জন চৌধুরী
স্যামসন এইচ চৌধুরী পরিবার ও স্কয়ার গ্রুপের অঞ্জন চৌধুরী ২০০৫ সাল থেকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্রমাগত অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) হিসাবে স্বীকৃত লাভ করেন। অঞ্জন চৌধুরী ২০০৮ সাল থেকে সর্বোচ্চ করদাতাদের একজন হিসাবে প্রশংসিত হন।
অঞ্জন চৌধুরীর জীবনী রচনা
প্রয়াত অনিতা চৌধুরী ও স্যামসন এইচ চৌধুরী পরিবার -এর এর কনিষ্ঠ পুত্র অঞ্জন চৌধুরী ১৯৫৪ সালের ১৭ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ ফ্লোরিডা থেকে ম্যানেজমেন্টে পড়াশোনা শেষ করেছেন।
অঞ্জন চৌধুরী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের (বিএলএফ) সদস্য ছিলেন ।বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতের দেরাদুন সেনানিবাসের চক্রতাতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কমান্ডো একজন ছিলেন অঞ্জন চৌধুরী।
অঞ্জন চৌধুরীর কর্মজীবন
স্কয়ার গ্রুপের অঞ্জন চৌধুরী মাছরাঙা টেলিভিশন , স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেড, স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড, স্কয়ার এয়ার লিমিটেড এবং মিডিয়াকম লিমিটেড সহ স্কয়ার গ্রুপের ছাতার অধীনে বেশ কয়েকটি উদ্যোগের সাথে জড়িত রয়েছেন ।
স্কয়ার গ্রুপের অঞ্জন চৌধুরী বছরের পর বছর ধরে, তিনি সান কমিউনিকেশন লিমিটেড, ভিশন টেকনোলজিস লিমিটেড, সান টেকনোলজিস লিমিটেড, ওরাকল ট্রাভেলস, এজিস সার্ভিসেস লিমিটেড এবং সান ডিস্ট্রিবিউশন নামে পরিচিত বিভিন্ন উদ্যোগের সাথে তার ব্যবসা সম্প্রসারিত করেছেন।
এছাড়াও অঞ্জন চৌধুরী ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ট্রাস্টের (ইএসটিসিডিটি) একজন ট্রাস্টি সদস্য । তিনি বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) সহ-সভাপতি এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বিএফএফ) একজন কাউন্সিলর ।
অঞ্জন চৌধুরী সোসাইটি ফর দ্য প্রমোশন অব বাংলাদেশ আর্ট (এসপিবিএ) এর চেয়ারম্যান এবং পাবনার অন্নোদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির সভাপতি।তিনি কুর্মিটোলা গলফ ক্লাব (KGC) নির্বাহী বোর্ডের সদস্য।তাছাড়াও তিনি পূর্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সহ-সভাপতি এবং কাউন্সিলর এবং আবাহনী লিমিটেড ঢাকার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
স্যামসন এইচ চৌধুরীর কনিষ্ঠ সন্তান অঞ্জন চৌধুরী তার পেশাগত স্বীকৃতি স্বরূপ AOAB (Aviation Operators Association of Bangladesh) এর সভাপতি, মাইক্রো ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যান্ড সার্ভিসেস (MIDAS), ATCO ( টেলিভিশন চ্যানেল মালিকদের সমিতি ) এর সভাপতি, Dmoney- এর চেয়ারম্যান, সান ফাউন্ডেশন এবং সান কমিউনিকেশনস লিমিটেডের চেয়ারম্যান পদ অর্জন করেন।
এছাড়াও অঞ্জন চৌধুরী বাপা (বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন) এবং বাংলাদেশ টয়লেট্রিজ অ্যান্ড কসমেটিক অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ছিলেন।
খেলাধুলা, সংস্কৃতি ও শিক্ষায় অঞ্জন চৌধুরীর অবদান
স্যামসন এইচ চৌধুরী পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তান অঞ্জন চৌধুরী খেলাধুলা, সংস্কৃতি এবং শিক্ষায় বিশেষ অবদান রেখেছেন।
খেলাধুলা
অঞ্জন চৌধুরীর খেলাধুলায় বেশকিছু অবদান রেখেছেন। তিনি বিভিন্ন স্পোর্টস কাউন্সিল, অ্যাসোসিয়েশন, ক্লাব ইত্যাদির সাথে যুক্ত এবং তিনি বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসপিএ) এর আজীবন সদস্যপদে সম্মানিত। অঞ্জন চৌধুরী পাবনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন এবং এখনও পরামর্শক হিসাবে তাদের অনুষ্ঠান পরিচালনা করে থাকেন।
তিনি পাবনা পাইরেটস এফসি (ফুটবল ক্লাব) এবং পাবনা পাইরেটস সিসি (ক্রিকেট ক্লাব) এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ছিলেন।অঞ্জন চৌধুরী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কর্তৃক জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার ২০০৯ -এ ভূষিত হয়েছেন ।
সংস্কৃতি
স্যামসন এইচ চৌধুরী পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তান স্কয়ার গ্রুপের অঞ্জন চৌধুরী ব্যবসার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অবদান রাখেন। তিনি ফিচার ফিল্ম " মনপুরা " এর জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০১১ সালে শ্রেষ্ঠ প্রযোজক হিসেবে ৩৪তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
অঞ্জন চৌধুরীর প্রযোজনা সংস্থা সান মিউজিক অ্যান্ড মোশন পিকচার্স লিমিটেডের অধীনে ২০২০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র " বিশ্বসুন্দরী " এর জন্য 45 তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মাধ্যমে পুনরায় সাফল্য অর্জন করেন।
অঞ্জন চৌধুরীর সান মিউজিক অ্যান্ড মোশন পিকচার্স লিমিটেডের অধীনে ২০২২ সালে রহস্য নাটক 'হাওয়া' নির্মাণ করেন।
এছাড়াও অঞ্জন চৌধুরী সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সংগীতের ভুবনেও কাজ করেছেন।২০১৫ সাল থেকে "ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট" নামে একটি আন্তর্জাতিক লোকসংগীত প্ল্যাটফর্ম এবং লোকসংগীতে নতুন প্রতিভা খুঁজে বের করার লক্ষ্যে একটি প্রতিভা প্রদর্শনী "ম্যাজিক বাউলিয়ানা" আয়োজন করেন।
"ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট" এর তিন দিনের লোক সঙ্গীত উদযাপন আয়োজনে সংগীত প্রতিভা দেশ-বিদেশের অসংখ্য লোক সংগীত শিল্পীরা একক মঞ্চে পরিবেশন করেন।এ শোটি বিশ্বব্যাপী লোকসংগীতকে প্রচার করতে এবং বাংলাদেশের জনগণের কাছে লোকসংগীতের বিশ্বকে পরিচিত লাভ করে।
শিক্ষা
অঞ্জন চৌধুরী শিক্ষাক্ষেত্র, নারী ক্ষমতায়ন এবং খাদ্যশিল্পের ও বিশেষ অবদান রেখেছেন।
অঞ্জন চৌধুরী অন্নোদা গোবিন্দের পাবলিক লাইব্রেরি এবং বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রের সংস্কারে অবদান রেখেছেন।তিনি ASTRAS, Poura Prathomik Biddaloy, Square Kindergarten, Square High School & College প্রতিষ্ঠাকালীন সূচনায় তার অবদান রয়েছে।
অঞ্জন চৌধুরী দিশারী কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। এটি দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বিকাশে কাজ করে। তিনি বিশেষভাবে সুবিধা বঞ্চিতদের জন্য টেকসই অর্থনীতি এবং শিক্ষাগত উন্নয়নের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা প্রকল্পগুলির সাথে জড়িত।
অঞ্জন চৌধুরী বাংলাদেশী রন্ধনশৈলীকে প্রচার করতে এবং খাদ্য শিল্পে স্থানীয় বাবুর্চিদের প্রাধান্য দিতে রিয়েলিটি শো " শেরা রাধুনি " শুরু করেছেন যা বাংলাদেশী রেসিপিগুলির সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং কৌশলগুলি তুলে ধরে সকলের কাছে।
0 Comments