২০২৪ সালের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রেষ্ঠ অসহযোগ আন্দোলনের ফলে ৫ ই আগস্ট বাংলাদেশের স্বৈরাচারী শাসক সাবেক প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। দেশের এ অবস্থায় দেশের অগ্রগতি উন্নয়ন সর্বোপরি একটি সুস্থ সমাজ ব্যবস্থা, একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও জান মালের পূর্ণ নিরাপত্তা আদায়ের লক্ষ্যে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও রাষ্ট্রপতি মোঃ শাহাবুদ্দিন ৮ই আগস্ট একটি অস্থায়ী বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেন। আজকে আর্টিকেলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন ২০২৪ এ বিষয়ে আলোচনা করব।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি
অন্তর্বর্তী অর্থ মধ্যবর্তী , অর্থঅন্তর্বর্তীকাল হ্যালো একটি ঘটনা এবং অন্য ঘটনার মধ্যে সময়ের একটি সময়কাল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হল একটি নির্দিষ্ট সময়কালীন সরকার সময়ের আগে কোন কারণে চলে যাওয়া বা পদত্যাগ করলে ওই সময়ের জন্য পরবর্তী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত একটি অস্থায়ী সরকার গঠনই হল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা অস্থায়ী সরকার বা জরুরী সরকার কে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলা হয়। একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা অস্থায়ী সরকার প্রায়শই একটি রাষ্ট্রের পতন, বিপ্লব, গৃহযুদ্ধ বা এর কিছু সংমিশ্রণ অনুসরণ করে একটি দেশের ক্রান্তিকাল পরিচালনা করার জন্য গঠিত হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা অস্থায়ী সরকার সাধারণত একটি গুরুতর সংকটের সাথে ক্ষমতায় আসে যা পূর্ববর্তী সরকারকে হঠাৎ করে এবং অপরিবর্তনীয় ভাবে পতনের কারণ করে। এ সরকার ব্যবস্থা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা থেকে আলাদা। যেগুলি একটি প্রতিষ্ঠিত সংসদীয় ব্যবস্থার মধ্যে শাসনের জন্য দায়ী এবং একটি নির্বাচন, অনাস্থা ভোট ও মন্ত্রিসভা সংকটের পরে অস্থায়ীভাবে কাজ করে, যতক্ষণ না একটি নতুন সরকার নিয়োগ করা যায়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ২০২৪
বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন বিগত দিনেও হয়েছিল। ১৯৯০ সালে গণ-আন্দোলনের মুখে এইচ এম এরশাদ পদত্যাগ করলে সংবিধানের মধ্য থেকে একটি প্রক্রিয়ায় বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছিল।
যা ১৯৯৬ সালে পাঁচ বছর পর আওয়ামীলীগ ও বিরোধী দলের আন্দোলনের ফলে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যোগ হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০১১ সালে আওয়ামীলীগই সংশোধনের মাধ্যমে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছিলেন।
৫ই আগস্ট ২০২৪ শেখ হাসিনার পদত্যাগের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার পক্ষ থেকে সংসদ বিলুপ্ত করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি মোঃ শাহাবুদ্দিন জাতের উদ্দেশ্যে ভাষণে জানান একটি অন্তবর্তী কালীন সরকার গঠনের কথা। ৮ই আগস্ট ২০২৪ ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস কে প্রদান উপদেষ্টা করে মোট সতেরো জন উপদেষ্টা নিয়ে শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তালিকা ২০২৪
৮ই আগস্ট ২০২৪ নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস কে প্রধান উপদেষ্টা করে মোট সতেরো জন উপদেষ্টা নিয়ে শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এদের মধ্যে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন সমন্বয়ক রয়েছেন এবং রাষ্ট্রপতি মোঃ শাহাবুদ্দিন। এরমধ্যে তিনজন উপদেষ্টা ঢাকার বাইরে থাকার কারণে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি। পরবর্তীতে তাদের শপথ গ্রহণ সম্পন্ন হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাগণ
১. প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস।
২. উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
৩. উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
৪. উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
৫. উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।
৬. উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
৭. উপদেষ্টা এম. সাখাওয়াত হোসেন
৮. উপদেষ্টা আ খ ম খালিদ হোসেন।
৯. উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ।
১০. উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ।
১১. উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম
১২. উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
১৩. উপদেষ্টা মোঃ নাহিদ ইসলাম
১৪. উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
১৫. উপদেষ্টা ফারুক - ই আজম।
১৬. উপদেষ্টা সু প্রদীপ চাকমা।
১৭. উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এর মেয়াদ
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা ৭ ই আগস্ট ২০২৪ রাতে রাষ্ট্রপতির সাথে বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ ও তাদের নিয়ে সরকার গঠিত হবে সে বিষয়ে আলোচনা করেন। এ বৈঠকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ কমপক্ষে তিন বছর হওয়ার বিষয়ে মত দেন। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ কত দিন হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
0 Comments