সেভেন সিস্টার্স এর আওতাভুক্ত ভারতের কোন রাজ্য বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী নয়

ভারতের সাতটি অঙ্গরাজ্য সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত। সেভেন সিস্টার্স নতুন করে আলোচনায় আসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস এর একটি বক্তব্যের মাধ্যমে। তিনি ভারতের সংবাদ মাধ্যম এনিডিটিভ কে এক অনলাইন সাক্ষাৎকারে বলেন, ' বাংলাদেশকে কেউ অস্থিতিশীল করতে চাইলে চারদিকে অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে পড়বে। প্রতিবেশী মিয়ানমার, ভারতের সেভেন সিস্টার্স পশ্চিমবঙ্গ সব জায়গাতে ছড়িয়ে পড়বে অস্থিরতা।' 


সেভেন সিস্টার্স এর আওতাভুক্ত ভারতের তিনটি রাজ্য বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী নয়। আজকে আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে সেভেন সিস্টার্স এর আওতাভুক্ত ভারতের কোন রাজ্য বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী নয় এবং সেভেন সিস্টার্স এর পরিচিতি বিষয়ে।



সেভেন সিস্টার্স এর আওতাভুক্ত ভারতের কোন রাজ্য বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী নয়



সেভেন সিস্টার্স এর আওতাভুক্ত ভারতের কোন রাজ্য বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী নয়

ভারতের মোট রাজ্য ২৮ টি তার মধ্যে পাঁচটি রাজ্য কেন্দ্র শাসিত। বাংলাদেশের তিন দিক থেকে ভারত দ্বারাপরিবেষ্টিত। তবে বাংলাদেশের কারণে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য দেশটির মানচিত্র থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য যথাক্রমে -অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মনিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরা সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত। 


সেভেন সিস্টার্স অর্থাৎ ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের এই সাতটি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শিলিগুড়ি কোরিডোর দিয়ে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত হয়েছে।মানচিত্রে এই ভূখণ্ডের আকৃতি দেখতে অনেকটা মুরগির ঘাড়ের মতো হওয়ায় সেভেন সিস্টার্স কে চিকেন্স নেক (Chicken's neck) ও বলা হয়। 


সেভেন সিস্টার্স এর আওতাভুক্ত রাজ্যসমূহের মোট আয়তন ২ লক্ষ ৬২ হাজার ১৮৪ বর্গ কিলোমিটার। যা ভারতে মোট আয়তনের প্রায় ৪ শতাংশ।  এ অঞ্চলের জনসংখ্যা ভারতের মোট জনসংখ্যার ৩.৭ শতাংশ। 


সেভেন সিস্টার্স এর আওতাভুক্ত ভারতের চারটি রাজ্য বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী সংযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাজ্য চারটি হলো - আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম এবং ত্রিপুরা।সেভেন সিস্টার্স এর আওতাভুক্ত ভারতের সাতটি রাজ্যের তিনটি রাজ্য বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী নয়। সেগুলো হল - অরুণাচল প্রদেশ, মনিপুর এবং নাগাল্যান্ড সেভেন সিস্টার্সের এই রাজ্য তিনটি বাংলাদেশ থেকে খানিকটা দূরে অবস্থিত। পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী হলেও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য নয় বলে পশ্চিমবঙ্গ সেভেন সিস্টার্স এর আওতাভুক্ত নয়। 


ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় এই সাতটি রাজ্য বরাবরই বেশ রহস্য ঘেরা। ভারতের অন্যান্য রাজ্য সম্পর্কে যতটা জানা যায় সেই তুলনায় সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলো বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী হওয়া সত্বেও এদের সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানি।


১৯৭২ সালে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যের বিখ্যাত সাংবাদিক জ্যোতিপ্রসাদ সাইকিয়া একটি রেডিও টকশোতে সর্বপ্রথম সাতটি রাজ্য অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মনিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরা প্রদেশকে একত্রে সেভেন সিস্টার্স অর্থাৎ সাত বোন নামে উল্লেখ করেন।বিখ্যাত সাংবাদিক জ্যোতিপ্রসাদ সাইকিয়া এ সাতটি প্রদেশের উপর 'Land of Seven Sisters' নামক একটি বই লেখেন। এরপর থেকেই ভারতের উত্তরপ্রদেশের সাতটি রাজ্য সেভেন সিস্টার্স নামে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। 


সেভেন সিস্টার্সের রাজ্যগুলো জাতিগত এবং ধর্মীয় দিক থেকে বৈচিত্র্যময় হওয়া সত্ত্বেও এরা একে অপরের প্রতি বেশ নির্ভরশীল। সেই সাথে সেভেন সিস্টার্স রাজ্য গুলোর ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সংস্কৃতিও অনেকটা আলাদা। সব রাজ্যের অধিকাংশ মানুষই আদিবাসী জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়। ভূ-রাজনৈতিক ভাবে এদের অবস্থান, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং বৈচিত্র্যময় সামাজিক কাঠামোর জন্য ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সেভেন সিস্টার্স সারা বিশ্বে অতুলনীয়। অর্থনৈতিকভাবে রাজ্যগুলো একে অপরের উপর নির্ভরশীল বলেই একে সেভেন সিস্টার্স বলা হয়। 


সেভেন সিস্টার্স এর আওতাভুক্ত ভারতের এ রাজ্যগুলোতে গারো, খাসিয়া, বোরো ও  মিজোদের মতো অনার্য আদিবাসীরা আজাদের শাসন ছিল। আসামের বরাক উপত্যকার মাধ্যমে মিজোরাম এবং মনিপুর রাজ্য ভারতের বাকি অংশের সাথে যুক্ত হওয়ায় ১৯৭২ সালে এই সাতটি রাজ্যকে সেভেন সিস্টার্স বা সাত বোনের মর্যাদা দেওয়া হয়। 



অরুণাচল প্রদেশ

ভারতের উত্তরপ্রদেশের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলোর মধ্যে আয়তনের দিক থেকে সবচেয়ে বড় রাজ্য হল অরুণাচল প্রদেশ। অরুণাচল প্রদেশের আয়তন ৮৩ হাজার ৭৪৩ বর্গ কিলোমিটার। অরুণাচল প্রদেশের রাজধানীর নাম ইটানগর। এই রাজ্যের পশ্চিমে ভুটান উত্তরে চীন এবং পূর্ব দিকে মিয়ানমার অবস্থিত। এ প্রদেশে ২৬ টি প্রধান আদিবাসী এবং ১০০ টিরও বেশি উপজাতির বসবাস। রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য মনোরম পাহাড় উপত্যকা এবং প্রাকৃতিক রোদের জন্য অরুণাচল প্রদেশ বিশেষ বিখ্যাত। সে কারণে অরুনাচল প্রদেশ কে বলা হয় ভোরের সূর্যের দেশ। 



আসাম 

সেভেন সিস্টার্স এর আওতাভুক্ত ভারতের আসাম রাজ্য বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী আয়তনের দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজ্য। আসাম রাজ্যের আয়তন ৭৮ হাজার ৪৩৮ বর্গ কিলোমিটার। আসামের রাজধানীর নাম দিসপুর। গুয়াহাটি এই প্রদেশের সবচেয়ে বড় শহর। 


১৮২৬ একটি চুক্তির মধ্যে দিয়ে আসাম সর্বপ্রথম ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। এ অঞ্চলের অসমতল ভূমির কারণেই অতীতে এর নাম হয়েছিল অসম পরবর্তীতে এটি আসাম নামে রূপ নেয়। আসামের অধিবাসী এবং ভাষাকে বলা হয় অসমীয়া। এ ভাষার সাথে বাংলা ভাষার অনেক মিল রয়েছে। তাছাড়াও এই প্রদেশের জনসংখ্যার চার ভাগের ৩ ভাগই বাঙালি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আসাম শহরকে বলা হয় নীল পাহাড় এবং লাল নদীর দেশ। 




মেঘালয়


সেভেন সিস্টার্স এর আওতাভুক্ত ভারতের আরেকটি রাজ্য মেঘালয় বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী প্রদেশ। মেঘালয় রাজ্যের আয়তন ২২ হাজার ৪২৯ বর্গকিলোমিটার। মেঘালয় এর রাজধানী শিলং। অতীতে মেঘালয় ছিল আসামের একটি অংশ। 


১৯৭০ সালে আসামের দুটি জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মেঘালয় রাজ্যের জন্ম হয়েছে। এটি মূলত একটি পাহাড়ি রাজ্য। গারো পাহাড়, খাসিয়া পাহাড় এবং জয়ন্তিয়া পাহাড়ের সমন্বয় মেঘালয় রাজ্যটি গড়ে উঠেছে। রাজ্য সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যগত দিক থেকে অনেকটা সমৃদ্ধ। বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় মেঘালয় রাজ্যে। অপরিসীম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে মেঘালয় রাজ্যকে প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড বলা হয়ে থাকে।



মিজোরাম

সেভেন সিস্টার্স এর আওতাভুক্ত ভারতের মিজোরাম রাজ্য বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী প্রতিবেশী রাজ্য। মিজোরাম রাজ্যের আয়তন ২১ হাজার ০৮৭ বর্গ কিলোমিটার। মিজোরাম এর রাজধানীর নাম আইজল। মিজোরাম রাজ্যটির বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার দুটি দেশের সাথে সীমান্তবর্তী সংযোগ রয়েছে। মিজোরামকে বলা হয় নীল পাহাড়ের দেশ। মিজোরাম শব্দটির মি অর্থ মানুষ, জো অর্থ পাহাড়, রাম অর্থ দেশ। একত্রের অর্থ দাঁড়ায় পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের দেশ। মিজোরাম এর  একুশ শতাংশ জুড়ে রয়েছে ঘন পাহাড়ি বন। 



নাগাল্যান্ড

সেভেন সিস্টার্স এর আওতাভুক্ত ভারতের নাগাল্যান্ড রাজ্য বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী নয়। সেভেন সিস্টার্স এর আওতাভুক্ত ভারতের একটি রহস্যময় রাজ্য হল নাগাল্যান্ড রাজ্য। নাগাল্যান্ডের আয়তন ১৬ হাজার ৫৭৯ বর্গ কিলোমিটার।  নাগাল্যান্ড এর রাজধানীকোহিমা। নাগাল্যান্ডের বৃহত্তম শহরের নাম ডিমাপুর। এটি ভারতের ক্ষুদ্রতম রাজ্যগুলোর মধ্যে একটি। সেভেন সিস্টার্সের নাগাল্যান্ড রাজ্যের মানুষ প্রায় সারা বছর বিভিন্ন উৎসবে মেতে থাকার কারণে নাগাল্যান্ড রাজ্যকে বলা হয় উৎসবের দেশ। 


ভারতের স্বাধীনতা দিবসের ঠিক আগের দিন ১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগস্ট  নাগারা নিজেদের স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিল। কিন্তু তারা তাদের সেই স্বাধীনতা ধরে রাখতে পারিনি। পরবর্তীতে ১৯৫১ সালে আরেকটি গণভোটের মধ্য দিয়ে নাগারা নিজেদের পূর্ণস্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তাদের স্বাধীনতা হরণ করে। তখনো নাগাল্যান্ড আসামের অন্তর্ভুক্ত ছিল।পরবর্তীতে ১৯৬৩ সালে আসাম থেকে আলাদা নাগাল্যান্ডকে ভারতের ১৬ তম রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। 



মনিপুর

সেভেন সিস্টার্স এর আওতাভুক্ত ভারতের মনিপুর রাজ্য বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী নয়। মনিপুর রাজ্যের আয়তন ২২ হাজার ৩২৭ বর্গ কিলোমিটার।  মনিপুর এর রাজধানী ইম্ফল। মনিপুরকে বলা হয় ভারতের রত্নভূমি। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দিক থেকে মনিপুর রাজ্য অত্যন্ত সমৃদ্ধিশালী। ১৮২৪ সালে বার্মার আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে মনিপুরের রাজা ব্রিটিশদের সহায়তা চায়। তখন থেকেই মনিপুর ভারতের একটি দেশীয় রাজ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। 


১৯৪৭ সালে মনিপুর একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করে। সে সময়েও বারমাদের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে মনিপুরের রাজা ১৯৪৯ সালে ভারতের সাথে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৯৫৬ সালে মনিপুর ভারতের কেন্দ্রীয় শাসিত রাজ্যে পরিণত হয়। ১৯৭২ সালে মনিপুর রাজ্য ভারতের পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা পায়।



ত্রিপুরা

সেভেন সিস্টার্স এর  আওতাভুক্ত ভারতের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য ত্রিপুরা। যার সাথে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী সংযোগ রয়েছে। ত্রিপুরা রাজ্যের আয়তন ১০ হাজার ৪৯১ বর্গ কিলোমিটার। ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা।১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার কারণে আগরতলা সকলের কাছে বেশ পরিচিতি লাভ করে। ত্রিপুরা কখনোই সরাসরি ব্রিটিশ সরকারের অধীনে ছিল না। ত্রিপুরা রাজ্য বরাবরই স্থানীয় রাজাদের দ্বারা শাসিত ছিল। 


১৯৪৯ সালে ত্রিপুরা স্বাধীন ভারতের অংশীদারিত্ব লাভ করে।১৯৫৬ সালে ত্রিপুরাকে ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে গ্রহণ করা হয়। সর্বশেষ ১৯৭২ সালে ত্রিপুরা একটি পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা অর্জন করে। 



সেভেন সিস্টার্স বলা হয় কোন অঞ্চলকে

ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য যথাক্রমে -অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মনিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরা সেভেন সিস্টার্স বা সাত বোন নামে পরিচিত। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের এই সাতটি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শিলিগুড়ি কোরিডোর দিয়ে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত হয়েছে।মানচিত্রে এই ভূখণ্ডের আকৃতি দেখতে অনেকটা মুরগির ঘাড়ের মতো হওয়ায় সেভেন সিস্টার্স কে চিকেন্স নেক (Chicken's neck) ও বলা হয়। 



সেভেন সিস্টার্স নামকরণ করেন কে

 ১৯৭২ সালে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যের বিখ্যাত সাংবাদিক জ্যোতিপ্রসাদ সাইকিয়া একটি রেডিও টকশোতে সর্বপ্রথম সাতটি রাজ্য অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মনিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরা প্রদেশকে একত্রে সেভেন সিস্টার্স অর্থাৎ সাত বোন নামে উল্লেখ করেন।বিখ্যাত সাংবাদিক জ্যোতিপ্রসাদ সাইকিয়া এ সাতটি প্রদেশের উপর 'Land of Seven Sisters' নামক একটি বই লেখেন। এরপর থেকেই ভারতের উত্তরপ্রদেশের সাতটি রাজ্য সেভেন সিস্টার্স নামে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। 



ভারতের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে সেভেন সিস্টার্স রাজ্যের ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভারতের ৬৩৫ উপজাতির মধ্যে ২১৩ টি উপজাতি গোষ্ঠী সেভেন সিস্টার্স রাজ্যে বসবাস করে। এ সকল উপজাতিদের প্রত্যেকের রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি। তারা ভারতের মূলধারার একত্রিত হওয়ার বিষয় সম্পূর্ণ ভিন্নমত পোষণ করে।সেজন্যই মূলত সেভেন সিস্টার্সে বসবাসরত বেশ কিছু জাতি ভারত থেকে স্বাধীন হতে চায়।


কিছু কিছু গোষ্ঠী ভারতের কেন্দ্রীয় শাসন থেকে স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানায়।অন্যদিকে কিছু সশস্ত্র আদিবাসী বাহিনী ভারত থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন হতে চায়।স্বাধীনতাকামী  এসকল দলসমূহকে ভারত সরকার নিষিদ্ধ, সন্ত্রাসী এবং জঙ্গি সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করেন। এ অঞ্চলের যেসব সংগঠন ভারত থেকে স্বাধীনতা লাভের দাবি করে তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হল ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম বা উলফা। 


বাংলাদেশের বহুল আলোচিত ১০ ট্রাক অত্র মামলায় যেসব অস্ত্র আটক করা হয়েছিল তা মূলত আসামের ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম বা উলফার  জন্যই আমদানি করা হয়েছিল। বিএনপির সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুর রহমান বাবর উলফা কে সহযোগিতা করার প্রচেষ্টার জন্যই তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। 


সেভেন সিস্টার্সের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন হল আসাম রাজ্যের বোরো উপজাতিদের জন্য স্বাধীনতার লড়াই করা বোরোল্যান্ড ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট। ভারত ও মায়ানমারের নাগা উদ্ধেষিত এলাকাকে স্বাধীন করতে চাওয়া সোশ্যাল কাউন্সিল অফ নাগাল্যান্ড। আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গের একটি অংশ দখল নিতে চাওয়া কামতাপুর মুক্তি সংস্থা। মনিপুর রাজ্যকে স্বাধীন করতে চাওয়া ইউনাইটেড ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফ মনিপুর এবং মনিপুর পিপলস লিবারেশন আর্মি। 


ত্রিপুরা জাতীয়তাবাদীর সংগঠন ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা এবং অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স। এছাড়াও আরো কিছু সশস্ত্র বাহিনী স্বাধীনতাকামী  সংগঠন সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলোতে সক্রিয় রয়েছে। সু দীর্ঘ কাল ধরে সেভেন সিস্টার্সের অঙ্গরাজ্য গুলো ভারত সরকারের কাছ থেকে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অবহেলিত। সেভেন সিস্টার্স রাজ্যসমূহ ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের তেমন কোন প্রসার ঘটেনি। 

Post a Comment

0 Comments