বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস ( Bangladesh Civil Service ) এর সংক্ষিপ্ত রূপ বিসিএস (Abbreviation BCS)। এটি রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার একটি স্থায়ী কাঠামো।বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ৪০০ বছরের পুরনো ইতিহাস রয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশের সিভিল সার্ভিস ইম্পেরিয়াল সিভিল সার্ভিস থেকে জন্ম হয়েছিল। অনেকেই ব্রিটিশ ভারতীয় সিভিল সার্ভিসকে আধুনিক সিভিল সার্ভিসের আঁতুড়ঘর মনে করেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হাত ধরেই ১৬০৮ সাল থেকে ব্রিটিশ ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। যা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনের পরে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নাম ধারণ করে।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস হঠাৎ করেই বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আজকে আমরা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস কবে প্রতিষ্ঠিত হয় সেই বিষয়ের উপর আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস কবে প্রতিষ্ঠিত হয়
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (Bangladesh Civil Service) অর্থাৎ বিসিএস (BCS) এর প্রতিষ্ঠাকাল আলোচনা করতে গেলে সিভিল সার্ভিসের প্রতিষ্ঠা লগ্নের ইতিহাস আমাদের জানা আবশ্যক। কেননা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ইতিহাস ৪০০ বছর পুরনো। ভারতীয় উপমহাদেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত ধরেই ১৬০৮ সালে সিভিল সার্ভিসের জন্ম হয়।
সিভিল সার্ভিস
সিভিল সার্ভিসের ইতিহাস ৪০০ বছরের পুরাতন ইতিহাস। ব্রিটিশ শাসনামলে ভারত উপমহাদেশে কাঠামোভিত্তিক সিভিল সার্ভিসের সূচনা হয়। ১৬০৮ সালে ব্রিটিশ ভারতে সিভিল সার্ভিসের যাত্রা শুরু। মূলত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত ধরেই ব্রিটিশ ভারতের মার্কেন্টাইল সাইকেল সার্ভিস এর যাত্রা শুরু হয়।
১৬০৮ সালে ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথম ভারতে বাণিজ্য কেন্দ্র স্থাপন করেন। ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি নিয়মিত সেনাবাহিনী নৌবাহিনী ছিল। তাই তাদের কোম্পানির বেসামরিক বা বাণিজ্যিক কর্মচারী থেকে নৌ বাহিনী সেনাবাহিনীর কর্মচারীদের আলাদা করার জন্য তাদেরকে সিভিলিয়ন বলা হতো। আর তাদের সার্ভিসকে সার্ভিস বলা হতো।
১৬০৮ সাল থেকে ১৭৭২ সাল পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ ভারতীয় সিভিল সার্ভিসকে মার্কেন্টাইল সিভিল সার্ভিস বলা হত। এ সময়কালকে আমরা তিনটি পর্বে ভাগ করে আলোচনা করতে পারি।
প্রথম পর্ব : ১৬০৮ সাল থেকে ১৭৫৭ সাল পর্যন্ত সময়কালকে প্রথম পর্বের মার্কেন্টাইল সিভিল সার্ভিস হিসেবে বিবেচনা করা হত। ১৬০৮ সালে ভারতের প্রথম ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাণিজ্য কেন্দ্র স্থাপন করেন। ১৬০৮ সাল থেকে ১৭৫৭ সাল পর্যন্ত কোম্পানি শুধুমাত্র বাণিজ্য কার্যক্রমের সীমাবদ্ধ ছিল। তাই কোম্পানির এই সময়কালকে সিভিল কর্মচারী বা সিভিলিয়ানদের মার্কেন্টাইল সিভিল সার্ভেন্টস বলা হতো।
দ্বিতীয় পর্ব : ১৭৫৭ সাল থেকে ১৭৬৫ সাল পর্যন্ত সময়কালকে দ্বিতীয় পর্বের মার্কেন্টাইল সিভিল সার্ভিস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ সময়ে তারা বাণিজ্যিক সিভিলিয়ান থাকলেও প্রশাসনিক কর্তৃত্ব বা প্রভাব বিস্তারের কাছাকাছি পৌঁছে যায়।
তৃতীয় পর্ব : ১৭৬৫ সাল থেকে 1772 সাল পর্যন্ত সময়কালকে তৃতীয় পর্বের মার্কেন্টাইল সিভিল সার্ভিস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৬৫ সালে দেওয়ানি ক্ষমতা লাভ করে। ফলে কোম্পানির কর্মচারীরা দ্বৈত শাসকের অংশীদারিত্ব পায়। ১৭৬৯ সালে তাদের মধ্য থেকে জেলা সুপারভাইজার নিয়োগ দেওয়া হয়। তখন থেকে তারা বাণিজ্যিক ও প্রশাসনিক সিভিল সার্ভেন্টস ছিলেন।
ভারতীয় উপমহাদেশে ১৮৯৩ সালে ব্রিটিশ ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের নাম 'ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস' (আইসিএস - ICS) রাখা হয়। ১৯৪৩ সালে ব্রিটিশ ভারতের সর্বশেষ আইসিএস (ICS) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস
১৯৪৭ সালের দেশ বিভক্তে ব্রিটিশ ভারতে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় ভারত ও পাকিস্তান নামে। ভারত পাকিস্তানের সৃষ্টি লগ্নে পাকিস্তানে ৮২ জন মতান্তরে ৯২ জন আইসিএস অফিসার এবং ভারতে ৭০০ জন আইসিএস অফিসার যোগদান করে।
তখন ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের 'ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস। (আইএএস - IAS) নামকরণ করা হয়। আর পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের ' পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস' নামকরণ হয়। পাকিস্তানে প্রাদেশিক সিভিল সার্ভিসও ছিল কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিসের পাশাপাশি। পূর্ব পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসকে ইস্ট পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস (ইপিসিএস - EPCS বলা হত। পাকিস্তান আমলে সিডিল সার্ভিস পরীক্ষার নাম ছিল সেন্ট্রাল সুপেরিয়র সার্ভিস পরীক্ষা বা সিএসএস (CSS) পরীক্ষা।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসের নাম রাখা হয় 'সুপেরিয়র পোস্টস'। আর পরীক্ষার নাম হয় 'সুপেরিয়র পোস্টস এক্সামিনেশন' বা ঊর্ধ্বতন পদের নিয়োগ পরীক্ষা।১৯৮০ সালে সিভিল সার্ভিসের নাম হয় বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (Bangladesh Civil Service) অর্থাৎ বিসিএস ( BCS )। আর তখন থেকে পরীক্ষার নাম হয় বিসিএস ( BCS ) পরীক্ষা।
তবে ১৯৭২ সালের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানে সিভিল সার্ভিস শব্দটা ব্যবহার করা হয়নি। সকল শ্রেণীর সিভিল সার্ভেন্টকে প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে নিয়োজিত ব্যক্তি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন ( Bangladesh Public Service Commission ) সংক্ষিপ্ত রূপ বিপিএসসি ( Abbreviation BPSC ) বিসিএস ( BCS ) এর প্রধান নীতি নির্ধারণ এবং নিয়োগ সংস্থা।
১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য 'সুপেরিয়র পোস্টস এক্সামিনেশন' আয়োজন করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশ এটি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের প্রথম ব্যাচ ছিল। যা ১৯৭৩ ব্যাচ বা মুক্তিযোদ্ধা ব্যাচ নামে পরিচিতি লাভ করে।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস মানে কি?
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস ( Bangladesh Civil Service ) এর সংক্ষিপ্ত রূপ বিসিএস (Abbreviation BCS) এর মানে হলো- যেখানে ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করার জন্য যে পরীক্ষা দিতে হয় সেটাই আসলে বিসিএস পরীক্ষা বা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস। একটা দেশের সরকারি চাকরি প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত। একটা হল সামরিক বা মিলিটারি সার্ভিস, অন্যটি হলো বেসামরিক বা সিভিল সার্ভিস।
ক্যাডার হিসেবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের নিয়োগ দেওয়ার জন্য যে পরীক্ষা গ্রহণ করে সেটাই হলো বিসিএস পরীক্ষা বা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ক্যাডার নিয়োগের জন্য গেজেট প্রকাশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন বিপিএসসি ( BPSC )।
বিসিএস ক্যাডার কত প্রকার?
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস ( Bangladesh Civil Service ) অর্থাৎ বিসিএস -এ দুই ধরনের ক্যাডার রয়েছে। একটি হল সাধারণ ক্যাডার, অন্যটি প্রফেশনাল বা টেকনিক্যাল ক্যাডার। বিসিএস পরীক্ষা হল বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পরীক্ষা। বর্তমানে বিসিএস ক্যাডার সংখ্যা মোট ২৬ টি।
বর্তমান বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসের ক্যাডার সংখ্যা কত?
বর্তমানে বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসের ক্যাডার সংখ্যা ২৬ টি। ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর পিএসসির (PSC) সুপারিশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ইকোনমিক ক্যাডারকে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একত্রিত করে গেজেট প্রকাশ করে। ফলে বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসের ক্যাডার সংখ্যা অর্থাৎ বিসিএস এর ক্যাডার সংখ্যা ২৭ থেকে কমে ২৬ টি হয়।
0 Comments